আজ বৃষ্টি ভেজার উল্লাসে



আজ বৃষ্টি ভেজার উল্লাসেঃ

তানভীর মেহেদী


আজকের দিনটা শুরু হয়েছিল বেস সাধারন একটা আট দশটা শুক্রবারের মত। আমার শুক্রবারটা সাধারন না কখনই, কারন আমার শুক্রবারে দু্ই দুইটা কোচিং ক্লাশ আছে। আজকে সকাল সকাল মানে ৮.৩০ এ ঘোম থেকে উঠলাম কারন আমার কিছু বাড়ীর কাজ করা বাকি ছিল। সেগুলু শেষ করে বেজে গেল ১০ টা। আয় হায় কাম সারছে আমার কোচিং এ ক্লাশত ১০.১৫  তে আর মাএ ১৫ মিনিট বাকি। এর মধ্যে আমার এক ফ্রেন্ডকে আনতে হবে, রিকসা ভাড়া করে মিরপুর ১০ নাম্বার যেতে হবে। 


কাজটা আমার সহয করে দিল আমার দুস্ত আসিফ, সে আগেই রেডি ছিল। তাকে সাথে নিয়ে আমি চললাম ১০ নাম্বার রিকশা করে। আমার বন্ধুর আবার কয়েক দিন ধরে আমার টাকার পিছনে লাগছে, সে বাসে যেতে চায় না, রিকশা ভাড়া লাগে ৩০ টাকা, আর বাস ভাড়া ২+২=৪ টাকা। সে ঠিক আছে রিকশা দিয়ে যাবার মজাই আলাদা, আর তারাতারি সেটা দিয়ে যাওয়া যায়, বাস এর মত কচ্ছপ গতিতে চলে না। মিরপুর ১০ নাম্বারের ওভার ব্রিজের উপর কিছু ছেলে মেয়ে মানুষের পা ধরে বসে থাকে, তাদের হাত থেকে টাকা না দিয়ে নিস্তার পাওয়া অসম্ভব। আজকে আবার আমার বন্ধু আসিফ কে পাকরাও করল এক মেয়ে (১০)। আমার বন্ধু আবার এই কায়দায় টাকা আদায় করা পছন্দ করে না। যেই মেয়েটি তার পা ঝেরে ধরেছে, আমার বন্ধুও কম যায় না, শুরু করে দির ফুটবল খেলা, মারল এক কিক, তবে কার গায়ে বা বলে নয়, হাওয়াতে, কিকের জোর এতটাই বেশি ছিল যে মেয়েটি আর তার পা ধরে রাখতে পারল না। আমি আগেই চলে এসেছেলাম, তাই সামনে দেখলাম এক লোক চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখণই বোজলাম এই তাহলে দালাল, এই বাচ্ছাদের সাহায্য দিয়ে লাভ নাই, কারন তারা এতে কিছুই পাবে না, সব নিয়ে যাবে এই দালালরা। 


আমাদের ক্লাশ শেষ হতে হতে ১২.৩০ বেজে গেল। বাসাতে ফিরতে ফিরতে বেজে গেল ০১.২০। কি আর করা আজকের জুম্মার নামাজটা আর পরতে পারলাম না। আমার মামা গত ইজতেমা থেকে ৩চিল্লায় গিয়েছিলেন, তিনি তার চিল্লা শেষ করে ফিরেছেন কাকরাইল মসজিদে, আমাকে যেতে হবে সেখানে। দেখা করতে হবে আর টাকা দিয়ে আসতে হবে। আমি বিকাল ৩.৪০ এর দিলে রওনা দিলাম।


বাসা থেকে নেমেই দেখি আকাশের মুখ বেজায় কাল, যেকোন সময় চলে আসতে পারে বৃষ্টি। আমি কাজীপাড়ার দিকে হাটা শুরু করলাম, রিকশা নেবার কথা ছিল কিন্তু নেওয়ার একটু আগে শুরু হল প্রচন্ড ঝড়। হাতের ছাতাটা মেলে ধরলাম আকাশে, ছাতায়ত আর মানায় না, প্রবল বর্ষন আটকানর ক্ষমতা এই ৫ বছরের বুুড় ছাতার নেই সেটা আমি জানি। কিন্তু কোথাও গিয়ে যে দাড়াব সে সময় আমার নেই, তারাতারি যেতে হবে। কোনরকমে কাকেক মত ভিজতে ভিজতে গেলাম কাজীপাড়া বাস ষ্টেন্ডএ । রাস্তায় হাটু সমান পানি জমে গেছে এই ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে। সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমাকে হাতের ইসারায় ডাকছে এক বাসের কন্টাক্টর, লাফিয়ে উঠে পরলাম বাসে। যাক বাচা গেল। বাস চলতেছে আর বৃষ্টি ঝড়তেছে সমানে। সামনে কিচ্ছু দেখা না যাবার করনে বাসের ড্রাইভার দিয়েছে গতী কমিয়ে। সে কোনমতে বিজয় স্বরনীর সিগনালে এসে বাস থামাল। এখানে থামার সাথে সাথে শুরু হল প্রচন্ড জোরে জোরে ঠাটা মানে বজ্রপাত। আহা সেকি বজ্রপাত, কি যে তার আওয়াজ, কানে তালা লাগিয়ে দিল রে। আমি ভয়ে ছিলাম বাসের উপরে না পরে। চারদিকে যেভাবে ডাকছে, সাথে চলছে বৃষ্টি। পরে বাসায় ফিরে জানলাম যে সেখানে ঐ সময় নাকি এতজন বজ্রপাতে মারা গেছে। 


বৃষ্টির একটি রোম্যান্টিক গান শুনুনঃ





কি আর করা মাথার উপর রাশি রাশি মেঘমাল আর ছাতার উপর বৃষ্টির নৃত্ত নিয়ে নেমে পরলাম মৎস ভবনের সামনে। সেখান থেকে হেটে যেতে হবে কাকরাইল মসজিদ। আহারে বৃষ্টি সারা শরির একেবারে ভিজে শেষ। ছাতা ছাতার যায়গাতে আছি, কিছুই আটকাতে পারতেছে না। চারদিক থেকে আসছে পানি, আমার শরির বাদ দিলাম, আমার মোবাইলটা বাচানর জন্য কি আর করব, বাচানর চেষ্টা করতে থাকলাম। একেবারে কাক ভিজা হয়ে সেগুন বাগিতা ক্রশ করে, মাত্রিভাষা ইন্সটিটিওট এর সামনে দিয়ে চলে এলাম। এসে একটা ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলাম। আর কি করা.....কিছুক্ষন সেখানে দাড়িয়ে থাকলাম, তারপর চলে গেলাম মসজিদের ভিতরে। মামার সাথে দেখা করলাম, নামাজ পরলাম..........মামাকে টাকা দিলাম.......তারপর আবার বাসাতে আসার জন্য বাসে উঠলাম।  আবার শুরু হল তিব্র বৃষ্টি। সারাটা রাস্তা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, শহরের রুবটের মত মানুষগুলি থেমে নেই চলছে তারা। কি বৃষ্টি কি বা ঠাটা, সবই তাদের কাছে নস্সি। তারা চলছে...........আর চলতে থাকবে। যা হক এবার আবার শুরু হল তুমুল সেই বৃষ্টি। কাজীপাড়াতে নেমে পানির জন্য রাস্তা পার হতে পারছি না। একটা লাফ দিয়ে কিছুটা পেরিয়ে সেই গিয়ে পানিতে পরলাম। তারপর একটা রিকশা ডেকে চলে আসতে লাগলাম বাসাতে। কিছুক্ষন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলেও আবার শুরু হল। রিকশার মামা আমাকে তার পলিথিন এগিয়ে দিল। সে হয়ত আজকে সারাটা দিনই ভিজতেছে, একেবারে ভিজে চুপসে গেছে সে। কি আর করা এখানে আমার মানব অধিকার কাজ করবে না। একেবারে বাসার সামনে চলে এলাম। 


সারাটা দিন বেশ ভালই গেল............এরকম একটা মজার বৃষ্টি শ্নাত বকেল আমি ভূলব না। এই বৃষ্টির দিনে আজি ঝর ঝর মোখর বাদল দিনে শুনতে মন চাইবেই.......





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য