নবীজী কিসের তৈরি - মাটি নাকি নূর



নবীজী কিসের তৈরি - মাটি নাকি নূর


মানুষ কিসের তৈরী? প্রথমেই বুঝতে হবে মানুষ কিসের তৈরী? কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। 


এবার কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করুন-


ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲ ﺧَﺎﻟِﻖٌ

ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِﻦ ﻃِﻴﻦٍ )71 )


অনুবাদ : যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন - আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব। {সূরা সোয়াদ-৭১}


অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ

ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮﻥٍ )26 )


অনুবাদ : নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা।{সূরা হিজর-২৮}


আরো ইরশাদ করেছেন যে, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুস্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। {সূরা আর রহমান -১৪, ১৫}


উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী।


এবার বুঝতে হবে নবীজী সাঃ কি ছিলেন? মানুষ? না জিন? না ফেরেস্তা? রাসূল সাঃ জিন নন, এ ব্যাপারে সকলে একমত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই।


এখন কথা হচ্ছে নবীজী সাঃ নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ? রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?


যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কি কারণ? পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এরকম শব্দে-


ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ

ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً )93 ( ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ

ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ

ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ

ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً )94 ( ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ

ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ

ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ

ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً )95 )


অনুবাদ : বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ


করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩,৯৪, ৯৫}


অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-


ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻮْﻻ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﻠَﻚٌ ﻭَﻟَﻮْ

ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﻘُﻀِﻲَ ﺍﻷﻣْﺮُ ﺛُﻢَّ ﻻَ

ﻳُﻨﻈَﺮُﻭﻥَ )8 ( ﻭَﻟَﻮْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻣَﻠَﻜًﺎ

ﻟَّﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﺭَﺟُﻼً ﻭَﻟَﻠَﺒَﺴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣَّﺎ

ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮﻥَ )9 )


অনুবাদ : তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে।{সূরা আনআম-৮,৯}


রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন? এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে।এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বুঝালেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু বেদআতীরাও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী সাঃ মানুষ নন। ফেরেস্তাদের মত নূরের তৈরী।যদি নবীজী সাঃ কে মানুষ বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে পূর্বোক্ত আয়াতের কারীমা অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে মানুষ মাটির তৈরী, তাই নবীজী সাঃ ও মানুষ তাই তিনিও মাটির তৈরী। আর যদি বলা হয় রাসূল সাঃ মানুষ নন, ফেরেস্তা, তাহলে মক্কার কাফেররা ফেরেস্তা কেন নবীরূপে পাঠানো হলো না এ অভিযোগ কেন করল? নবীজী সাঃ মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন পাঠালেন নবী করে ফেরেস্তার বদলে?


সুতরাং বুঝা গেল মানুষ ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন। রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। 


ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ

ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً )93 ( ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ

ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ

ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ

ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً )94 ( ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ

ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ

ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ

ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً )95 )


অনুবাদ : বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম। {সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩,৯৪, ৯৫}


আরো ইরশাদ হয়েছে-


ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ

ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ

ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮ ﻟِﻘَﺎﺀ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ

ﻋَﻤَﻼً ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻻ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ

ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ )110 )


অনুবাদ : বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। {সূরা কাহাফ-১১০}


অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-


ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ

ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ

ﻓَﺎﺳْﺘَﻘِﻴﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻩ ُ

ﻭَﻭَﻳْﻞٌ ﻟِّﻠْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦ َ )6 )


অনুবাদ : বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ। {সূরা হা-মীম সাজদা-৬}


অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-


ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﺍﻟْﺨُﻠْﺪَ

ﺃَﻓَﺈِﻥ ﻣِّﺖَّ ﻓَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ )34 )


অনুবাদ : আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি।সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? {সূরা আম্বিয়া-৩৪}


লক্ষ করুন নবীজী সাঃ বলতেছেন নিজে, যে আমি মানুষ, তারপর আবার যদি কেউ মনে করে যে তিনি বিষেশ ভাবে তৈরি কোন মানুষ, সে কারনে তিনি বলতেছেন যে আমি তোমাদের মতই মানুষ, মানে আমরা যে মাটি দ্বারা বা যেভাবে তৈরী তিনিও সেভাবেই আমাদের মতো তৈরি, আমাদের মতোই মানুষ, এবং এটা তিনি নিজে বলে গেছেন। 


রাসূল সাঃ মানব ছিলেন এর বহু প্রমাণ হাদীসেও পাওয়া যায়। নিম্ন ৩ টি হাদীস উদ্ধৃত করা হল-


হাদীস নং ১ : হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমিতো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০৩২১}


হাদীস নং ২ : অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন- আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}


হাদীস নং ৩ : হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র।আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}


উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে। রাসূল সাঃ নূরের তৈরী হলে রাসূল সাঃ এর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীরা কিসের তৈরী?



এবার আসুন আরেকটি হাদীসের দিকে খেয়াল করি: 



ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺑﻠﻐﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ

ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻌﺾ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ

ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻓﺼﻌﺪ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﻓﻘﺎﻝ

ﻣﻦ ﺃﻧﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺃﻧﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ

ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ

ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻠﻖ

ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﺧﻠﻘﻪ

ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ ﻓﺮﻗﺘﻴﻦ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ

ﺧﻴﺮ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺧﻠﻖ ﺍﻟﻘﺒﺎﺋﻞ

ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﻗﺒﻴﻠﺔ ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ

ﺑﻴﻮﺗﺎ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮﻫﻢ ﺑﻴﺘﺎ

ﻓﺄﻧﺎ ﺧﻴﺮﻛﻢ ﺑﻴﺘﺎ ﻭﺧﻴﺮﻛﻢ

ﻧﻔﺴﺎ-1/169، ﺭﻗﻢ

ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ3532- )


অনুবাদ : হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন- আমি কে? সাহাবীগণ বললেন- আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ।আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তমভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। {সুনানে তিরমিযী, হাদীসনং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬}


এ প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, রাসূল সাঃ যদি মাটির তৈরী না হয়ে নূরের তৈরী হয়ে থাকেন। তাহলে রাসূল সাঃ এর সম্মানিত আম্মাজান আমিনা ও সম্মানিত আব্বাজান আব্দুল্লাহ যাদের ঔরসে তিনি জন্ম নিলেন তারা কিসের তৈরী? সেই সাথে নবীজী সাঃ এর সন্তানরা কিসের তৈরী? মাটির না নূরের? মাটির তৈরী থেকেতো মাটিই হবে। আর নূর থেকেতো নূরই হবে, তাই নয়কি? সুতরাং চিন্তা ভাবনা করে এসব উদ্ভট দাবি তোলা উচিত যে, রাসূল সাঃ নূরের তৈরী। যেখানে এ ব্যাপারে কোন সুষ্পষ্ট দলিলই নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের আবেগ আর অন্ধতাকে পূজি করে রাসূল সাঃ কে মাটির থেকে নূরের তৈরী বানিয়ে ফেলাটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।


এখন আসুন দেখি নূরের তৈরি তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী? একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া। মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ।


দলিল-

ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺁﺩَﻡَ


অনুবাদ : নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। {সূরা বনী ইসরাঈল-৭০} 


আগুনের তৈরী জিন বা নূরের তৈরী ফেরেস্তাকে মর্যাদা দান করার কথা বলা হয়নি কুরআনের কোথাও। কিন্তু মাটির তৈরী মানুষকে মর্যাদা দান করার কথা আল্লাহ তায়ালা সুষ্পষ্টই ঘোষণা করেছেন। যা স্পষ্টই ৱ প্রমাণ করে নূরের তৈরী হওয়াই কেবল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়? তাছাড়া আগুনের তৈরী জিন আর নূরের তৈরী ফেরেস্তাদের দিয়ে মাটির তৈরী মানুষ হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তায়ালা সেজদা করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আগুনের তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়া কোন শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী হল- ভিতরগত গুন যার শ্রেষ্ঠ সেই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ। চাই সে মাটির তৈরী হোক, চাই নূরের তৈরী হোক চাই আগুনের তৈরী হোক।


ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦ

ﺭُّﻭﺣِﻲ ﻓَﻘَﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳﻦَ )29 (

ﻓَﺴَﺠَﺪَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﻥَ)

(30)


অনুবাদ : যখন আমি তাকে পূর্ণতা দিলাম এবং তাতে আত্মা ফুকে দিলাম, তখন


সবাই তাকে সেজদা করল। সকল ফেরেস্তারাই একসাথে তাকে সেজদা করল।{সূরা হিজর-২৯,৩০}


সুতরাং মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাঃ কে নূরের তৈরী বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা একটি অহেতুক চেষ্টা। তিনি মাটির তৈরী একজন মানব। তবে তিনি মহামানব। আল্লাহ তাআলার পর তিনিই শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মাটির তৈরী সকল মানুষ, আগুনের তৈরী সকল জিন, নূরের তৈরী সকল ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ। যেমন সকল নূরের তৈরী ফেরেস্তার মাঝে হযরত জিবরাঈল আঃ শ্রেষ্ঠ।তেমনি মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ সকল মাটির


তৈরী পয়গম্বর আঃ ও সকল মানুষ ও সকল জিনও ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তার মত উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কোন সৃষ্টি আল্লাহ তাআলা কখনো সৃজন করেন নি, কখনো করবেন ও না। এর পরও রাসূল সাঃ কে মাটির তৈরী থেকে নূরের তৈরী বানানোর অযথা চেষ্টা করাটা একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।


এখন আসুন আরো কিছু দিকে নজর করি, নবী করিম সঃ বলছেন যে, তোমরা সবাই আদমের সন্তান, আদম হলো মাটি দিয়ে, আর আমি আদম সন্তানদের লিডার, তিনি সন্তান হিসেবে লিডার, আদমকে মাটি দিয়ে বানানো হইছে, সেহেতু মাটির মানুষ থেকে সন্তান হিসেবে মাটির মানুষি জন্ম নিবে। 


সূরা আল-কাহাফে নবী সঃ কে আল্লাহ পাক বলেন, তুমি বলে দেও আমি মানুষ, মানে মানুষ ছাড়া আর কিছু না, এবং তোমাদের মতোই মানুষ। সুতরাং নবী সঃ আমাদের মতোই একজন মানুষ ছিলেন। 


এখন আসেন আমরা নূর নিয়ে একটু আলোচনা করি, নূর কয়েক প্রকার হয়ে থাকে, কিছু হলো কারো মাথায় অনেক বুদ্ধি বা অনেক পরিমান বিদ্যার ঙ্গান আছে, তাদের বলে ঙ্গানী নূর। আর আরেকটা হলো নূর, যাকে বোঝানো হয় আলো, যাকে আলোর সমার্থক শব্দ বলা হয়। 


এখন আমি যদি বলি মানুষ নূরের তৈরী, তাহলে আপনি কিন্তু আমার সাথে মতভেদ করতে পারবেন না। আপনি বলতে পারেন না মানুষ মাটির তৈরি,, কিন্তু আমি বলবো মানুষ মাটি আর নূর দুই এ তৈরী, কারন মানুষের শরীরে নূর আছে, মানে আলো আছে। 


কিভাবে মানুষের শরিরে আলো আছে, তা হলো, মানুষের শরীর তৈরি কোষের মাধ্যমে, আর সেই কোষ গুলিকে যদি আপনি ভাংতে থাকেন তাহলে পাবেন অনু, এখন অনুকে ভাংলে আপনি পাবেন দুটি পরমানু একটি নিউট্রন আরেকটি প্রোটন, এই নিউট্রন আর প্রোটন কে ভাংগা যায় না, আপনি জানেন কি নিউট্রন আর প্রোটন হলো নূর, মানে আলো, পৃথিবির সব কিছুর শেষে, একেবারে ক্ষুদ্র পর্যায়ে রয়েছে নিউট্রন আর প্রোটনের খেলা, মানে আলো, তারমানে নূর। তাহলে প্রত্যেকটা মানুষের শরীরের মসমের কোষ গুলিকে বিন্যাস করলেও আপনি পাবেন নিউট্রন প্রোটন, মানে আলো, মানে নূর। 


এখন আবার দেখুন, আল্লাহ আদম আঃ কে মাটি দ্বারা বানানোর পর সমস্ত নূরের তৈরি ফেরেসতাদের সেজদা করতে বলেছিলেন, এমনকি আগুনের তৈরি জনিদের সর্দার শয়তান কেও, সে সেজদা না করে বাহাদুরি করে বলেছিলো আমি আগুনের তৈরী আর সে মাটির, সুতরাং আমার দাম বেশি, সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সেজদা না করার কারনে তাকে বেহসত থেকে বিতারিতো করা হয়। তাহলে আল্লাহ কাকে বেশি সম্মান দিলেন, নূর কে না মাটি কে, আগুন কে না মাটি কে। 


এখন অনেকে বলে আল্লাহও ত নূরের তৈরি তাহলে। এটা আপনাদের মূর্খতা, কারন আল্লাহর নূর সেটা আলাদা জিনিস, তিনি খালেক, তিনি মাখলুক না, আল্লাহর নূর এক জিনিস আর মাখলুখি নূর আলাদা জিনিস, নবী করিম সঃ ছিলেন একজন মাখলুক, মাটির তৈরী। ফেরেসতারা মাখলুখ নূরের তৈরী, তাহলে কি আপনারা আল্লাহর নূরের সাথে ফেরেসতাদের নূর মিলিয়ে ফেলবেন। 


এখন আবার অনেকে বলে আল্লাহর শরিরের এক টুকরা নূর দিয়া নবী করিম সঃ কে বানানো হয়েছে, যদি সেটা করা হতো তাহলে আল্লাহ বার বার কেন আয়াত নাজিল করলেন যে, হে নবী আপনি তাদের বলুন যে আমি একজন মানুষ, আমাকে তোমাদের মতই মাটি থেকে তৈরী করা হয়েছে, আমি তোমাদের মতই এখজন মানুষ। এখন আপনি কি বলতে চান আল্লাহ নবী করিম সঃ কে তার নূরের দ্বারা সৃষ্টি করে ভুল আয়াত নাজিল করে আমাদের থেকে সত্য গোপন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।


আগুন, মাখলুকি নূর (ফেরেসতাদের), এসব থেকে মাটি সর্বোত্তম, কারন মাটি দিয়ে যা তৈরী করা হয় তাকে ভাংলে অবশেষে নূর বা আলো পাওয়া যায়, মাটিতে মানুষ হয়, মাটিযে পশু পাখি সব হয়, মাটিতে ফল মূল থেকে শুরু করে সব হয়, আবার মাটিকে ভাংলে নিউট্রন প্রোটন পাওয়া যায়, মানে নূর পাওয়া যায়। আর নূর বা আগুন থেকে আলাদা কোন কিছু উৎপাদন করা যায় না, আগুন থেকেও শুধু আগুনি, আলাদা কিছু হয় না। কিন্তু মাটি থেকে সব হয়, সব, কারন মাটিতে নূর ও  মাটি দুটিই বিদ্যমান। তারমানে মাটিই সেরা। 


এখন সেরা কাউকে আবেগ দ্বারা শুধু নূর বললে তাকে সেরার কাতার থেকে নিচে নামানো হয়। আর সব কথার শেষ কথা হলো, অল্লাহ বলছেন আমার সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি হলো মানুষ, যারা কিনা মাটির তৈরী। নূরের তৈরী না। শুধু নূরের তৈরী শরির কাটলে রক্ত ঝরে না। আমরা জানী নবীজি একবার দাওয়াতের কাজে বের হয়েছিলেন, তায়েফের মানুষ ছোট ছেলেমেয়ে তার পিছনে লেলেয়ে দিয়েছিলো ঢিল ছুরার জন্য, আর তাতে নবীজির শরির থেকে রক্ত ঝরেছিলো। 


এত কিছু বলার পর, আলোচনা করার পর আপনি যদি মনে করেন নবীজি মাটির না নূরের তৈরী তাহলে আপনার চাইতে হাদারাম আর বোকা দুনিয়াতে নাই।  


******************************************************



লিখেছেন ও সম্পাদনা কেরেছেন


*** মোঃ তানভীর মেহেদী ***    


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ