শেষের চিঠি

শেষের চিঠি
তানভীর মেহেদী 

সে ছিল সাধারণ! শত মানুষের ভীড়ে আলাদা করে দেখবার মত নয়। তবে চোখে যেন কি পড়েছিল, ওই দূর থেকে মাথায় কমলা রঙের হিজাব পরা মেয়েটি চোখে গেঁথে থাকত! ঘিয়ে রঙা চেহারাটা চোখ এঁটে থাকত সারাক্ষন। তার টলটলে কালো চোখের মণিতে মন ডুবে থাকত সবসময়। তার চোখের চাহনি ছিলো অসাধারন, একবারতো বলেই দিলুম, এভাবে কটমট করে তাকিও না, এই চোখে ডুবে গেলে আর ঠাই পাবো না, ডুবে মরে যাবো। সাবধান বানী শুনিয়েছিলে সেদিন, তাতে তেমন কাজ হয় নি, সাদ করে ঝাপ দিয়েছিলাম তোমার চোখের মনিতে। হাবুডুবু খেয়ে এখন তলিয়ে গেছি অতলে। 

নাসিকা যন্ত্রে না হয় গন্ধ সুবাস সনাক্ত করা যায়, চোখে কী এমন যন্ত্র স্থাপন করা হলো যে, তাকে ছাড়া কিছু নজরে আসে না! নাকি চোখ নামক অন্ত্রে কোন চৌম্বকীয় পদার্থ ফিট করা আছে যে, চক্ষুদয় তাকে দেখলে স্থির ডুবে থাকত। আর সে না থাকলে বোজা-বুজির সায় নেই; নির্ঘুম রাত, মৃদ্য সিম্পনীর তাল আর দায়সারা বালিশে হেলান দিয়ে অথর্ব অলীক কল্পনা; আর ক্লান্তির শেষে ঘুমের মাঝে চোখ পিটপিট র্যাপিড-আই মুভমেন্টে তার সাক্ষাত মেলা! হুম মাঝ রাতে তার আচমকা সাক্ষাত অনেকবারই হয়েছে, সবি অদ্ভুত, ভয়ানক। যতবারই সাক্ষাত হয়েছে ততবারই ভয় দেখিয়েছে। তারপর যখন তার সাথে স্বপ্নে সাক্ষাতের গল্প বলেছি, কখনো মুক্তার মতো দাত গুলা দেখিয়ে, আবার কখনো ঠোট টিপে টিপে হাসার চেষ্টা করেছে। 

একবার রাতে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো, বসে বসে ভাবছিলাম তুমি সাথে থাকলে হয়তো তোমার সাথে ছাদের কার্নিসে বৃষ্টিতে ভিজতাম। ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। তারপর রাতের শেষের দিকে তুমি আচমকাই সাক্ষাত দিলে।ঘটনাটা এরকম, মাথার উপর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, আমি কাকের মতো ভিজে গেছি, সার্ট বৃষ্টির পানিতে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে যাতা অবস্থা হয়ে গেছে, কিছুটা শীত শীত লাগছে, শরীরটা হালকা কাপছেও বটে। ঠিক তখনি তুমি ছাতা হাতে উদয় হলে, তোমার চুলে আর মোখে বৃষ্টির পানির ছটা। চুলের ডগা বেয়ে ফোটা ফোটা পানি গালের উপর পরছে। আমি তোমার চোখের দিকে প্রচন্ড মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছি। তুমি আচমকাই হাত ধরে টেনে তোমার ছাতার নিচে নিয়ে গেলে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার আমি, তুমি কি কি যেনো বললে। আমি কিছুই শুনলাম না। স্বপ্নে মানুষের কথা শুনা যায়না হয়ত। তারপর দুজনে কি মনে করে হাটা শুরু করলাম। তুমি তোমার লম্বা উরনার কিছু অংশ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বৃষ্টির পানি মোছে ফেলার জন্য ইশারা দিলে। স্বপ্ন ভংগো হলো।

তুমি  ছিলে- নির্মলেন্দু গুণ সাহেবকে ডেকে এনে আরেকটা "আকাশ সিরিজ" লিখিয়ে নেবার মত প্রেরণা! কিংবা জীবনানন্দের কবিতায় আমি যদি ঘটাঘট ব্যাকস্পেস চেপে "বনলতা সেন" কেটে তোমার নামটা বসিয়ে দিতে পারতাম! তোমার নামটা কী যেন? বনলতা সেনের মতই তো তুমি, অন্ধকার বিদিশার নিষা।  কোন একদিন তোমার সহীত একাকি মোখমোখি বসিবার সাদ ছিলো, সে সখ পুরন করার জন্য হয়ত হাজার বছর পৃথিবী তে হাটতে হবে আমাকে। তুমি শুরু নাকি শেষ? এখনও আছ কি? বহুদিন খুঁজি না তোমায়! বিশ্বাষ করো, মিথ্যে কথা সবটাই, প্রতিদিনি তোমাকে খোজে সকাল হয়, প্রতিদিনি তোমাকে খোজে খোজে রাত্রী আসে আমার চোখে। কিন্তু এই শত কুটি তারকা খচিতো আকাশের নিচে তুমি হয়ত আর বসবাস করো না, নাকি আমিই ঠিক মতো খুজিতে পারি না। কোথায় তুমি?

প্রকৃতি কী এক অনুভূতিতে বেঁধেছে আমাদের! চৈত্রের শেষে পাকা তাল মাথার ওপর টুপুস করে পড়লে যেমন চোখ কপালে উঠে দাঁতে দাঁত লেগে যায়; আবার সেই তাল পাখার বাতাসে গ্রীষ্মের দাহনে প্রাণ ভোমড়া জুড়ায়! মাথায় পাকা তাল পরার মতো অনুভুতি হয় মাঝে মাঝে। তাল পাখার অস্তিত্ব এখন আর নেই, তপ্ত গ্রীষ্মের দহনে প্রান সিক্ত করতে এখন আর তুমি নেই। এখন কালবৈশাখিই একমাত্র আশা, প্রচন্ড বেগে যা আমার উপর ঝরে পরে, শীতল করে সকল দহনে তেতে উঠা প্রান।  মায়া আবেগ অনুভূতি ঠিক জায়গায় গিয়ে সেট হলে- ভেসে ভেসে মন যায় বৃন্দাবন; আবার ভুল জায়গায় জুয়া লাগিয়ে ধোঁকা খেয়ে গেলে, জীবন ছন্দহীন চোখে-মুখে গাঢ় অন্ধকার!

তবু মানুষ যুগে যুগে মন দেবে, পোড় খাবে, দেবদাস থেকে দেব-ডি হবে, পার্বতী থেকে প্রতারক হবে, কেউ হয়ত আবার চাদ মুখ থেকে চন্দ্রমুখি হয়ে ভালবাসার বিচ্ছুরন ঘটাবে। কেউবা প্রেমে সফল হয়ে ছাতা বগলদাবা করে বাজার হতে বড় মাথাওয়ালা মাছ নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি ছুটবে; কেউ কী-বোর্ডে ঝড় তুলে আমার মতো ছাইপাশ লিখবে! চক্রাকারে আবদ্ধ হবে জীবনানন্দের বনলতারা, আর শরৎ বাবুর দেবদাস গুলি পরে পরে মার খাবে, লাল নীল পানির ফোয়ারা ছোটাবে, অন্তিম পর্বে কি বোর্ডের ঘটঘট শব্দ গুলি কানে বাজবে, প্রীয়তমার চোখের কালো মনি তখন ঝাপসা হতে হতে হারিয়ে যাবে।

কিছু নীতি কথা আছে, যেমন ধরুন, অ্যাকুরিয়ামে রাখা মাছ নাকি বেশি দিন বাঁচে না; সফল স্টুডেন্ট নাকি বেশিদিন নীতি ধরে রাখতে পারেন না; তেমনি সফল প্রেমিক নাকি বেশিদিন ঘর করতে পারে না; আবার আঙ্গুর ফল টকও হতে পারে! নীতি গুলি খুবই অদ্ভুত।আজকাল তো দেখি বছরের পর বছর অ্যাকুরিয়ামের মাছ বেঁচে থাকে, খায় দায় কিন্তু সাইজে বড় হয় না, আর আমাদের ক্লাশের সবচাইতে ভালো ছেলেটি প্রতি বারের মতো শেষ বছরেও সবচাইতে ভালো রেজাল্টি করে। আর বেশির ভাগ আংগুর আজকাল মিষ্টিই হয়।

তবে পোড় খাওয়া প্রেমিক সংঘের দাবী, "লাখ টাকা দামী সব অনুভূতি ধরা খেলেও- কৈ মাছের মত ডাঙ্গায়-জলে সব খানে খাবি খেয়ে জ্যান্ত থাকে ঠিকই!" তারা মরে না, তারা হয়ত চুপসে যায়, কিন্তু জ্যান্ত থেকে নরাচরা করে দাবী করে, আমায় কেটে ফেলেছো, কিন্তু লাভ কি, তপ্ত তেলে ছেড়ে দিলেও আমি কোমর নাচিয়ে বলবো, আমি আছি, মরি নি, অনুভুতি গুলি এখনো জ্যান্ত।  তারা ফিলিংস ধরে রাখে হৃদয়ে- নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা-নিশীথিনী-সম। তুমি রবে নিরবে, হৃদয়ে মম।

পোড় খাওয়া প্রেমিক সংঘের ব্যানারে জাতীয় কবি-র লিখা কতিপয় লাইন বেশ বড় আকারে ইটালিকে তেকোনা করে খানিকটা বাঁকিয়ে বোল্ড করে লিখা থাকে, "এত শঠতা এত যে ব্যথা, তবু যেন তা মধুতে মাখা। "তাদের মেটাফরিক প্রতিবাদের ভাষা নিষ্ফল, দুর্বোধ্য, অবাঞ্ছিত এবং অতিরঞ্জিত! তাদের উদ্দেশ্যহীন মিছিল সফল হোক! শেষ কালে জীবনানন্দের বনলতায়, নজরুলের প্রেয়সির চুলের খোপায়, আর রবী ঠাকুরের তুমি যাহা চাও তাই যেনো পাও আমি যত দুঃখ পাইগো নামক নিষ্টুরতায় বেচে থাকুক সকল প্রান। সফল হোক এই চিরন্তন পথ চলা, তোমার আমার সকলের। যতই হোক এ জীবন করুন অনুভুতির, "তবু ভালোবাসা জেগে থাকে প্রাণে!" 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ