সারদা আসার গল্প

শাহ জালাল - তানভীর মেহেদী  


তানভীর মেহেদীঃ অবশেষে ৩০ জুন ২০২০ তারিখে আমার সারদা যাবার তারিখ ঠিক হলো। গত ১৩ জুন পুলিশ একাডেমিতে আসার কথা থাকলেও ৮ জুন ২০২০ তারিখে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরিক্ষায় দুর্ভাগ্যবসত পজেটিভ চলে আসার কারনে ১৩ জুন আমার সারদা আসা হয়নি, অবশেষে ১৫ ও ২৪ জুন পরপর দুইবার করোনা পরিক্ষার ফল নেগেটিভ আসার কারনে ৩০ জুন আমাদের পুলিশ একাডেমিতে প্রেরন করার জন্য তারিখ স্থির করা হয়।

আমরা কুমিল্লা জেলা থেকে মোট ৪৪ জন ৩৮ তম সাব ইন্সপেক্টর পদে সুপারিশ প্রপ্ত হই। তারপর ৪০ জন করোনা নেগেটিভ হয়ে ১৩ জনু পুলিশ একাডেমি তে চলে আসে আর আমরা ৪ জন করোনা পজেটিভ হয়ে কুমিল্লার আলেখারচরের ময়নামতি হোটেলে থেকে যাই, শুরু হয় আমাদের করোনা বিজয়ের যুদ্ধ। একদিকে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হবার চিন্তা অন্যদিকে বাবা মা আত্মীয় স্বজনদের চিন্তা, সব দিক মিলিয়ে একটি দুঃসহ সময় পার করে এসেছি আমরা।


জালাল ভাই এর গল্পঃ 



কোভিড-১৯ ময় জীবন।


২০২০ জুন ০৭-২৯ তারিখ ২৩ দিন।


শাহ জালালঃ ০৭ জুন ২০২০ বাড়ি থেকে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির উদ্দেশ্যে বের হয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে চলে আসি। ০৮ তারিখ নিয়ম অনুযায়ী যারা ট্রেনিংয়ের জন্য আসবে সবাইকে কোভিড টেস্ট করাতে হতে হবে।  সেদিন টেস্ট এর পর ১১ তারিখ আমার রেজাল্ট পজেটিভ আসে। সেদিন কি করবো কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাকে পাঠানো হলো আইসোলেশনে।  


সেখান থেকে ১৫ তারিখ ২য় টেস্ট করানো হয় IEDCR থেকে। আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। কয়েকদিন পর  ৩য় টেস্ট করানো হয় কুমিল্লা মেডিকেলে কলেজে।  এই রেজাল্টও আলহামদুলিল্লাহ নেগেটিভ আসে। 


তবে এই ২৩ দিনের জার্নিটা খুব কঠিন ছিল। হোটেল রুমে খাবার দিয়ে যেত সিড়ির কাছে। কেউ আসলে খুব দূর থেকে কথা বলে যেত। তার চেয়েও বেশি কষ্ট লাগছিল যেদিন আব্বা আম্মা দেখতে আসে। আমি নিজেই তাদেরকে বলি উপরে আসিয়েন না। কাছে আসিয়েন না। দূর থেকে কথা বলে পাঠিয়ে দেই। কখনও এমন দিন আমার জীবনে আসবে আমি ভাবিও নাই যে মা-বাবাকে এত কাছে থেকেও ধরে দেখতে পারবো না। কাছে যেতে পারবো না। 


প্রতিটা দিন কাটতো একেকটা বছরের মতো। পরিবার পরিজন আর আপনজনদের সাপোর্ট ছিল খুব বেশি। আমি যতই ভেঙে পড়ি না কেন তারা সাহস দিত। মনোবল শক্ত রাখতো। যারা এই সময় পাশে ছিল তাদের কাছে আমি সারাজীবনের জন্য ঋণী হয়ে গেলাম। আব্বার প্রতিটা কথা বাবা কিছু হবে না আল্লাহ ভরসা, মায়ের দোয়া, আর পরিবারের অন্যান্য যারা আছেন আপনজন সবার দোয়ায় আল্লাহ তা'আলা সুস্থ করে দিয়েছেন।


আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ কাছে। প্রতিটা নামাজে আল্লাহ কাছে চেয়েছি সেজদায় কেদেছি আল্লাহ ফেরান নি। তিনি সুস্থ করে দিয়েছেন।


এই রোগটা অসুস্থ যতটা বেশি করে তার চেয়েও বেশি যন্ত্রনা হচ্ছে মানসিক ভাবে। তাই মনোবল ধরে রাখতে হবে। এই রোগে ভয়ের কিছুই নেই। সুস্থ হবেন ইনশাআল্লাহ।  শুধু নিয়ম মেনে চলা, ঔষধ গুলা খাওয়া আর আল্লাহ কাছে দোয়া করবেন। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে সব।


আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুক এই দোয়া করি।


আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন পুলিশ একাডেমিতে আছি। সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।






            



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ