এখন থেকে ফিল্ড টেস্ট থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে এস আই-এ যোগদান নিয়ে লিখবো ভাবছি। হয়তো অনেকের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করছি। সাথে একটি অনুরোধও করছি- আমি যে বিষয় নিয়ে লিখেছি, প্লিজ এটা নিয়ে কারো প্রশ্ন থাকলেই কেবল প্রশ্ন করবেন। বাকি বিষয় নিয়েও আস্তে আস্তে সাজেশন পাবেন। পরীক্ষার সকল বিষয়য়ের প্রস্তুতিসহ সব বিষয় নিয়েই লিখবো ইনশাআল্লাহ। ফিল্ড টেস্ট দিয়েই আজ শুরু করলাম।
ফিল্ড টেস্ট বা শারীরিক পরীক্ষার আদ্যোপান্তঃ
অনেকেই ফিল্ড টেস্ট নিয়ে চিন্তিত। খুব সাধারণ কিছু বিষয় নিয়েও উদ্বিগ্নতা দেখলাম অনেকের মাঝেই। আজ তাই সে বিষয় নিয়েই লিখছি।
আশা করি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন
👉পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই মূলত আপনার ছুটে চলা শুরু। অনেকেই বলেন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে কিভাবে আবেদন বা এপ্লাই করবে। কিন্তু, এস আই-তে আবেদনের কোন পদ্ধতি নেই। এটার জন্য আলাদাভাবে অনলাইন বা এমনিতে আবেদনের কোন বিধান নেই। সরাসরি ফিল্ড টেস্ট। মনে রাখবেন, ফিল্ড টেস্ট সবার জন্যই উন্মুক্ত।
👉👉 বিজ্ঞপ্তিতে রেঞ্জ ও জেলাভিত্তিক তারিখ, সময় ও স্থানসহ প্রার্থীদেরকে ফিল্ড টেস্টের জন্য উপস্থিত হওয়ার জন্য সুন্দরভাবে নির্দেশনা দেয়া থাকে। কোথায় কখন এবং কি কি নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে তার বিশদ সেখানেই পাবেন।
👉👉 প্রত্যেক জেলার জন্য আলাদা তারিখ থাকতে পারে, আবার একইদিনে রেঞ্জের একাধিক জেলার শারীরিক পরীক্ষাও থাকতে পারে। আপনার নিজের যেদিন মাঠ পরীক্ষা, তার আগেরদিন চলে আসার চেষ্টা করবেন। মাঠ পরীক্ষার আগেরদিন আশেপাশে এসে থাকলে পরদিন রিল্যাক্সে মাঠে আসা যায়। মাঠ পরীক্ষার আগের রাতের ঘুমটা খুব প্রয়োজন।
👉👉 মাঠে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বার কয়েক চেক করে নিবেন সব ঠিক আছে কিনা। একটি কাগজও যদি মিসিং থাকে, তাহলে কিন্তু নিজের স্বপ্ন সেখানেই দাফন করে আসতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১. সকল একাডেমিক সনদ
(SSC, HSC, Honor's, Master’s- যদি মাষ্টার্সেরটা থাকে)
২. নাগরিকত্ব সনদ
৩. চারিত্রিক সনদ
৪. অবিবাহিত সনদ
৫. কম্পিউটার সনদ
৬. জাতীয় পরিচয়পত্র
(নিজের না থাকলে বাবা-মা দু'জনেরটাই লাগবে)
৭. রঙিন পাসপোর্ট
সাইজের ছবি (কমপক্ষে ৪ কপি)
** ২, ৩, ৪ নং সনদ ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা কাউন্সিলর অফিসে পাবেন। কম্পিউটার পারেন না পারেন আপনার ব্যাপার, কিন্তু সনদটা লাগবেই। সবগুলোই একজন ১ম শ্রেণির গ্যাজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে। ৩/৪ সেট করে রাখবেন।
👉👉 গেইটে যাওয়ার পর আপনাদেরকে মাঠে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে। সেখানে গিয়ে দেখবেন জেলার থানানুযায়ী সিরিয়ালের জন্য বোর্ড টাঙানো।
সকল কাগজপত্র নিয়ে নিজের থানার সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, সিরিয়ালে আগে থাকবেন তো ১১/১২ টার মধ্যেই কাজ শেষ করে বাসায় থাকবেন। নয়তো রাতের ৮/৯ টাও বাজতে পারে। বাসায় এসে দেখবেন রোদের তাপে শরীরে গেঞ্জির ছাপ পড়ে গেছে 😢
👉👉 লাইনে দাঁড়ানোর পর পুলিশের একটা মাপকাঠি এনে ৫'৪" উচ্চতা মাপা ধরবে। কাঠিতে যাদের মাথা লাগবে, তারাই মাঠে থাকবে, আর যাদের মাথার উপর দিয়ে কাঠিটা ফ্রিলি ঘুরবে, সে বাদ।
👉👉 ওখানের দায়িত্বে থাকা অফিসার আপনাদের সবার হাতে নীল রঙের একটা কাগজ দিবে। সেটা পূরণ করে অপেক্ষা করবেন। আপনাদেরকে পরে ১০ জন করে ডেকে মাঠের মাঝে নিবে।
সেখানে দৌড়, জাম্প ও রোপ ক্লাইম্বিং করতে হবে। ভয় পাবেন না, এগুলো জাস্ট এভাবেই করে। বাদ দেয় না। শুধু দেখবে আপনি ফিজিক্যালি ফিট কিনা। দৌড়াতে কোন সমস্যা আছে কিনা।
👉👉 এই ৩টা টেস্ট দেখার পর আপনার হাতের নীল কাগজে একজন স্যার ওকে লিখে সিগনেচার করে দিবেন। এটা নিয়ে আবার অপেক্ষা করবেন পরবর্তী ডাকের জন্য। সেখানেও সিরিয়ালে থানার ১০ জন করে ডাকবে। ১/২ জন কর্মকর্তা মেশিনের মাধ্যমে উচ্চতা, বুকের মাপ ও ওজন চেক করে ফর্মে লিখবে। শুধুমাত্র যারা অতিরিক্ত বেশি ওজনের, তাদেরকেই সেখানে বাদ দেয়া হয়।
👉👉 তারপর আপনাকে তাদের প্যান্ডেলের ডেস্কে পাঠাবে, সেখানে ৩ টাকার একটা টিকেট কিনে নিয়ে সকল সনদ দেখিয়ে আবেদন ফরম নিতে হবে সেখান থেকে। মোটামুটি মাঠের কাজ এখানেই শেষ।
👉👉 আবেদন ফরম দেয়ার সময়ই বলে দিবে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট কিনে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। তাই এরপরের কাজই ব্যাংক ড্রাফট করা। এক্ষেত্রে, ফিল্ড টেস্টের ২/৩ দিন আগে যেকোন শাখা থেকে এটা করে রাখতে পারেন, তাহলে সেদিন মিনিমাম ২ ঘন্টা বাঁঁচবে।
পসিবল হলে কাগজপত্রের সাথে ২/৩ বড় সাইজের খাম বা এনভেলাপ নিয়ে রাখবেন।
👉👉 আপনাদের বলে দেয়া হবে কোথায় আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। ব্যাংক ড্রাফট হয়ে গেলে সেখানে আসবেন। এসে সনদ, কাগজপত্র দেখে দেখে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আবেদনপত্রটি পূরণ করবেন। কোন প্রকার ভুল যেন না হয়।
👉👉 বিজ্ঞপ্তি দেখে দেখে কি কি কাগজ চেয়েছে তার সব কপি যতটা করে চায় ততটা করে খামে ভরে নিবেন। ভালো করে দেখবেন সব দেয়া হয়েছে কিনা।
সব ঢুকানো হলে গাম দিয়ে এনভেলাপের মুখ লাগিয়ে দিবেন ভালো করে। খামের উপরে কি লিখতে হবে সেটা সেখানকার দায়িত্বে থাকা লোকই আপনাকে বলে দিবে।
সব শেষ হয়ে গেলে আবেদনপত্র জমা দেয়ার বক্সে সেটা ফেলে চলে আসবেন।
ব্যস, ফিল্ড টেস্ট + আবেদনপত্রের কাজ শেষ।
(বিঃদ্রঃ যারা সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ, তারা এই ফিল্ড টেস্ট নিয়ে একদমই ভাববেন না। ফিল্ড টেস্টে শারীরিক কোন প্রতিবন্ধকতা, উচ্চতা কম এবং অতিরিক্ত ওজন ছাড়া কাউকে বাদ দেয়না। তাই এটা নিয়ে একদমই ভাবার কিছু নেই।)
সবার জন্য শুভকামনা
তানভীর মেহেদী
সাব ইন্সপেক্টর
৩৮ তম এস আই ক্যাডেট ব্যাচ
বাংলাদেশ পুলিশ
অন্যান্য লিংক সমুহ
★ সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের সার্কুলার
0 মন্তব্যসমূহ
ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য