![]() |
যুদ্ধে হেরে যাওয়া জাতী পাকিস্তান |
বাঘের খাঁচায় অদম্য
জীবন, বলছি একাত্তরের এক রোমহর্ষক ইতিহাস।
একাত্তর সালে ঠাকুরগাঁও মহকুমা প্রশাসক ছিলেন তসলিম উদ্দীন (এসডিও) শখ করে তার বাংলোতে দুটো চিতাবাঘ পুষতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হার্মাদ বাহিনী দুটো চিতাবাঘই ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সালাহউদ্দীন ১৯৭১ সালে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। দেশমাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ১০ নভেম্বর ১৯৭১, তিনি সংবাদ পান তাদের বাড়ি থেকে তার বাবাকে পাকিস্তানী সেনারা ধরে নিয়ে গেছে তারই জন্যে। সেদিন শেষ রাতে (১১ নভেম্বর ১৯৭১) সংগোপনে ক্যাম্প ছেড়ে নিজ গ্রাম কোষারানীগঞ্জের দিকে রওয়ানা দেন। সূর্য উঠার আগেই নিঃশব্দে তিনি বাড়ি এসে পৌঁছেন। কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে ততই তিনি উপলব্ধি করেন বাড়িতে থাকা তার জন্য একটুও নিরাপদ নয়।
১১ নভেম্বর ১৯৭১ সেদিন শুক্রবার।সকাল থেকেই শহীদ সালাহউদ্দিনের মা রান্না চড়িয়েছেন। মায়ের ইচ্ছে অনেকদিন পর ছেলেকে একটু ভাল-মন্দ খাওয়াবেন। ঠিক সে মুহূর্তে স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে খবর পাঠিয়েছিল সালাহউদ্দিনের নিজ বাড়িতে আগমনের। খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন জামান জীপ নিয়ে ছুটে যায় সালাহ্উদ্দিনের বাড়ির দিকে।
এদিকে সালাহউদ্দিনের বাড়িতে অতি যত্নে রান্না করা মুরগির মাংস মা তুলে দেন ছেলের প্লেটে। সালাহ্উদ্দিন ভাত মুখে দিতে যাবে এমন সময় অকস্মাৎ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় সবুজ জীপ। চিৎকার করে মা জড়িয়ে ধরেন সেই পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন জামানের পা। ভিক্ষা চাওয়ার মত করে তার মা বললেন, ‘ওর বদলে আমাদের দু’জনকে নিয়ে যাও’। কিন্তু ক্যাপ্টেন জামানের মন গলেনি।
সালাহ্উদ্দিনকে ঠাকুরগাঁও ইপিআর হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে ব্যর্থ হয়ে, নির্ভীকচিত্ত তরুণ মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিনকে খালি গায়ে হাত-পা বেঁধে বাঘের খাঁচার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। খাঁচার মধ্যে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা করুণ আর্তনাদ করলেও বর্বর পাকিস্তানীরা ও দেশীয় রাজাকার-আলবদররা উল্লাসে মেতে উঠে। চোখের পলকে দু’টি চিতাবাঘ সালাহউদ্দিনের উন্মুক্ত বুক ও মুখের উপরে থাবা বসিয়ে দেয়। ক্ষীণস্বরে ’মা’ বলে তার একটি আর্তচিৎকার অর্ধস্বরে থেমে যায়।
একাত্তরের নভেম্বর ছিল রোজার মাস, ১১ই নভেম্বর ছিল নাজাতের শেষ দশদিনের একদিন। জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রান উৎসর্গকারী শহীদ সালাহউদ্দিন সেদিন পাকিস্তানী বর্বর হায়েনাদের থেকে নিস্তার পায়নি। বাঘের খাঁচায় নিজের জীবন দিয়েছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, তাঁর মৃত্যুর মুহূর্তে ইপিআর ক্যাম্পের মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসছিল জুম্মার নামাজের আজান।
পাকিস্তান মূলত অমানুষদের আবাস, যাদের পূর্বপুরুষ ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়েছিল এ দেশে আর বর্তমান পুরুষ সেটা সম্পর্কে জানার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করেনা এমনকি বিশ্বাসও করেনা। যারা ধর্মের নামে আমাদের দেশের ওপর হামলে পরেছিল। সেই পশুদের কোন ক্ষমা নেই, থাকতে পারেনা। আর ৪৭ বছর পর যেসব অমানুষ ধর্ম টেনে পাকিস্তান প্রেম দেখায় তাদেরও ক্ষমা নেই।
কৃতজ্ঞতাঃ সৈয়দ মেরাজুল হোসেন ও বাসস
©গেরিলা ১৯৭১
সংগ্রহঃ @asma.rahman.1042
0 মন্তব্যসমূহ
ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য