বউ কথা কও - লাজুক পাখি


ভারতীয় কোকিল’ বা ‘বউ কথা কও’ গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী পাখি। কোকিল গোত্রীয় পাখি পরিবারের এ সদস্যের ইংরেজি নাম Indian Cuckoo। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ, দ‌ক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন ও রাশিয়ায় দেখা যায়, একাকী, নিভৃতচারী ও লাজুক পাখি হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। বনাঞ্চলসহ উন্মুক্ত গাছ-গাছালিপূর্ণ এলাকা থেকে শুরু করে ৩,৬০০ মিটার উঁচুতেও এদের দেখা যায়।

বউ কথা কও পাখিটি ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এরা। ওজন ১২০-১৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের পালকের রং ভিন্ন হলেও দেখতে অনেকটা একই রকম লাগে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির দেহের উপরিভাগ ধূসর বাদামি। গলা ও বুকের ওপরটা বাদামি ছাই। লেজে রয়েছে চওড়া কালচে ডোরা। স্ত্রী পাখির গলা ফিকে ধূসর। ধূসর বুকের গোড়ায় লালচে পীতাভ আমেজ। চোখের মণি হালকা বাদামী থেকে লোহিত আকারের হয়ে থাকে। ঠোঁট কালো। পা, আঙুল ও নখ হলুদ। স্ত্রী বউ কথা কও পাখি সনাক্তকরণের সহজ উপায় হল, পুরুষের তুলনায় এদের গলা, বুক ও লেজের দিক হালকা ধূসর বর্ণের হয়। পেটের অংশটুকু সরু থাকে।

বউ কথা কও একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। শুঁয়াপোকা, ঘাসফড়িং, পঙ্গপাল, উড়ন্ত উইপোকা, ফল, গিরগিটি খায়। ‘বুকো-টাকো-বুকো-টাকো…’ স্বরে ডাকে, যা কতকটা বউ কথা কও শোনায়। পাখিটি অতি উচ্চৈস্বরে সুর করে ডেকে ওঠে। সাধারণভাবে তাদের ডাকে যে চারটি বোল শনাক্ত করা হয়ে থাকে, সেগুলো শুনতে লাগে অনেকটা – অরেঞ্জ-পিকো, বুকো-টাকো-বুকো-টাকো, ক্রসওয়ার্ড পাজল বা ওয়ান মোর বোটল। অঞ্চলভেদে সুরের ভিন্নতা খুব কমই দেখা যায়। বাংলা ভাষায় বুকো-টাকো-বুকো-টাকো-ই আঞ্চলিকভাবে বৌ কথা কও নামে অভিহিত করা হয়। চীনে এ সুরটির মাধ্যমে শেষ থেকে জেগে ওঠাকে নির্দেশ করে। ভারতের কাংড়া উপত্যকায় পাখির ডাককে হোয়ার ইজ মাই শিপ নামে শোনা যায়, যার অর্থ হচ্ছে মৃত রাখালের আত্মা।

বউ কথা কও পরজীবি পাখি হিসেবে পরিচিত। স্ত্রীজাতীয় পাখিটি একটিমাত্র ডিম পাড়ে। ফিঙে এবং কাকের ন্যায় কালো পাখির বাসায় ডিম পেড়ে উধাও হয়ে যায়। অবশ্য ডিম পাড়ার পূর্বে ফিঙে অথবা কাকের একটি ডিম খেয়ে ফেলে কিংবা নীচে ফেলে দেয়। চীনের উত্তরাংশে পাখিটির ডিম পাড়ার মৌসুম হচ্ছে মে থেকে জুলাই, ভারতীয় উপমহাদেশে মার্চ থেকে আগস্ট, বার্মায় জানুয়ারি থেকে জুন এবং মালয় উপত্যকায় জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়কাল। ১২ দিন অতিবাহিত হবার পর ডিম ফুটে বাদামী বর্ণের বাচ্চা জন্মে। আমুর এলাকায় ১৪ দিন সময় ব্যয় হয়। ছানা উড়তে শেখে ১৮-২০ দিনে। আয়ুষ্কাল প্রায় ৭ বছর।

বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক একটি গণমাধ্যমে বলেন, পৃথিবীতে ১১ হাজারের বেশি পাখি প্রজাতির মধ্যে ১০০ প্রজাতির ‘কোকিল’ রয়েছে যারা প্রজননের ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন। সকল পাখি ডিম পেড়ে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়, লালন-পালনের মাধ্যমে ছানাকে বড় করে। শুধু ওই ১০০ প্রজাতির কোকিলের বেলায় প্রজনন ভিন্ন। অন্য পাখি বাসায় ডিম পেড়ে আসা- এই মারাত্মক ঝুঁকিটা কোটি বছর ধরে করে আসছে কোকিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ