পুলিশের মৃত্যু ও জনগনের পৈশাচিক আলহামদুলিল্লাহ


মাত্র ৪৫ দিনের কর্মময় জীবনে রোকন  কাউকে গালি দেয়নি, কাউকে আঘাত করেনি, দূর্নীতি করেনি, তারপরও তাঁর মৃত্যুতে আমাদের বন্ধুদের(জনগণের)  উচ্ছ্বাস কাটা হয়ে বুকে বিধছে। বাবা নেই, মারা গিয়েছেন ২০১৪ সালে। কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় গৃহিণী মায়ের সামর্থ্য ছিল না সন্তানকে পড়াশুনা করানোর।

নিজের অদম্য ইচ্ছায় টিউশনি করে ও কৃষক ভাইয়ের সহায়তায়  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আইসিটি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেছেন, ৪০ তম বিসিএসে প্রিলি-রিটেন শেষে এবার ৪১ এ পুনরায় প্রিলি দিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোয়ার। মাঝে ৩৭ তম ক্যাডেট ব্যাচে এস আই হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।

বলছিলাম অদম্য মেধাবী রোকনের কথা। গতকাল যিনি কোন এক অপূর্ণতার অাক্ষেপে অাত্মহত্যা করেছেন। গত ২৮ ফেব্রুআরি ২০২১ ইং তারিখে পিএসআই শেষে গোপালগঞ্জ জেলার ৩৭ ব্যাচের  সবাই যখন কনফার্ম হলো,  জেলা সদর থানায় রোকনের সাথে প্রথম দেখা হয়, জানালো ওর পোষ্টিং হয়েছে পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী থানায়। জানতাম না সেটাই সর্বশেষ দেখা। 

২৫  বছরের জীবনে যে ছেলে হাল ছেড়ে দেয়নি, ছাত্রজীবনের অভাব,কষ্ট, যন্ত্রনায় যে হার মানেনি, পেশাগত জীবনের মাত্র দেড় মাসেই সে হাল ছেড়ে দিল। যে কোন মৃত্যুই কষ্ট দেয়, কিন্তু একই জেলার, একই পরিবারের(পুলিশ পরিবার), মেধাবী ভদ্র ছেলেটির এই অকাল প্রস্থান এবং ওর ব্যাচম্যাট প্রিয় ছোট ভাইদের কান্নাভেজা মুখ আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে। 

কিন্তু তার থেকে অনেক বেশী  কষ্ট পাচ্ছি রোকনের মৃত্যু পরবর্তী আমাদের বন্ধুদের(জনগণ) প্রতিক্রিয়া দেখে। রোকনের মৃত্যুতে আমাদের বন্ধুদের উচ্ছ্বাস কাটা হয়ে বুকে বিধছে। হ্যা বন্ধুই...! পুলিশ জনগনের বন্ধু!  অন্যদিকে রোকনের মৃত্যু যাদের ব্যথিত করেছে, তাদের প্রায় সবাই পুলিশ অথবা পুলিশ পরিবারের সদস্য।

আগামীকাল থেকে লকডাউন। ঈদের ছুটির মতো সবাই ছুটছে পরিবারের কাছে। অথচ আমাদের লকডাউন নেই, ঈদ নেই, শুক্রবার নেই, শনিবার নেই,পরিবার নেই,ছুটি নেই, ঘুমের ঠিক নেই,খাওয়ার সময় নেই। এমনকি কারো সহানুভূতিও নেই। পেশাগত জীবনের সীমাহীন প্রেশার তার উপর পরিবারের প্রেশার। করোনাকে সামনে রেখে বন্ধুদের(জনগনের) জন্য সব বিসর্জন দিয়েছি আমরা।

ছেলেটা কারো সাথে কিছু শেয়ারও করেনি। অথচ কি চমৎকার প্রতিদান পেল। যেকোন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু সংবাদেই এই একই চিত্র দেখি। আমিও হয়তোবা একদিন দূর্ঘটনা, করোনা বা অন্যকোন কারনে মারা যাবো। আমার মৃত্যু সংবাদও লিখা হবে। সংবাদের নিচে অসংখ্য বন্ধুদের(জনগন) আনন্দ, আলহামদুলিল্লাহ ও হাসির চিহ্ন দেখে আমার মেয়ে/ছেলেটি নিশ্চয় অবাক হবে...!! ভাববে তাকে সময় না দেওয়া, ম্যাজিক(লজেন্স) আনতে ভুলে যাওয়া, দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রিয় তার  "ভাল বাবাটি মানুষ হিসাবে কতইনা খারাপ ছিল। 😥

লেখাঃ .....এস আই তারিক

৩৩ তম ব্যাচ/২০১২।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ