ঈদ মোবারাক সবাইকে। এক মাস সিয়াম সাধনা করার পর আবার এলো ঈদুল ফিতর। সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কর্ম জীবনে প্রবেশ করার পর আমার প্রথম ঈদুল ফিতর। আমার চাকরিটা যেহেতু পুলিশের, ছুটি সেখানে সহযে হয়না এটাই স্বাভাবিক। আমারো হচ্ছিল না ছুটি। ঈদের দুদিন আগে মানে ৩০ এপ্রিল জানতে পারলাম আমার ৪ দিনের ছুটি হয়েছে। যাক বাড়ি যাওয়া এক কথায় নিশ্চিত হওয়া গেলো। অন্যান্য জেলায় ৫ দিন করে ছুটি দেওয়া হলেও আমাদের চট্টগ্রাম জেলায় ছুটি দেওয়া হয়েছে ৪ দিন মাত্র। তাতে তেমন কোন সমস্যা নাই, ছটি যে পেয়েছি এতেই আমি খুশি।
ঈদের দুদিন আগে মানে ১ মে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন থেকে সকাল সকাল রওনা হলাম সবাই মিলে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। রাস্তা একেবারে খালি হয়ে আছে, কোন মানুষজন নাই এমনকি তেমন কোন গাড়িও চলছে না। দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো, যাব আরামে বাড়ি পৌছাতে পারবো। অলংকার ষ্টেশনে এসে দেখি বাস কাউন্টার গুলিতে কিছটা ভির থাকলেও চিন্তা করার কিছু নাই, বাসে উঠার জন্য টিকিটই কাটতে হলো না। যাত্রীর তেমন কোন চাপ নাই, ফলে খালি বাসে লাফিয়ে উঠে বসলাম। সিটটা একটু পিছনের দিকে মাঝামাঝি পর্যায়ে হলো আমার।
বাসের ড্রাইভার একটু বেশি ভাবে আছে মনে হলো। তার বাসের গতী ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার এর বেশি মনে হলো। কারন চিটগং থেকে কুমিল্লা চলে আসলাম মাত্র ২ ঘন্টারো কম সময়ে। বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, কুটুম্বপুর নেমে সাতগাও এর একটা সিএনজি রিজার্ভ করে সোজা আমার গ্রামে চলে আসলাম। আসতে আসতে নিভে গেলো আমার সিএনজির হেডলাইটের আলো, নষ্ট হয়ে গেছে হয়ত। গভীর অন্ধকার ঘনিয়ে এলো চারদিকে, এদিকে গ্রামের রাস্তা, কিছুই দেখা যায়না চারদিকে। রাস্তার দু পাশে খাল, সিএনজি কখন খালে চলে যায় সে চিন্তায় পরে গেলাম। আস্তে আস্তে ফোনের আলো ব্যাবহার করে বাড়িতে চলে আসলাম।
তারপর দিন শেষ রোজা এসে আমাদের সামনে উপস্থিত হলো। রমজান মাসের ৩০ তারিখ আজ, ২০২২ সালের শেষ রোজা কাল ঈদ। মনটা খারাপ হয়ে গেলো, রমজান মাসটা খুব ভালো লাগে। মাসটা বিদায় নিচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। আবার সামনের বছর বেচে থাকি কিনা সেটা কে জানে। সন্ধ্যায় সবাই একসাথে বসে ইফতার করলাম। বাবা মার সাথে এটাই বছরের প্রথম ইফতার আর বছরের শেষ ইফতার। গত বছর আমি ছিলাম পুলিশ একাডেমিতে, সেখানে রোজা, ইফতার আর ঈদ সবি করেছিলাম। করোনার কারনে সরকার আমাদের ছুটি দিতে পারে নাই সে বছর। এক বছর পর বাবা মার সাথে ইফতার করলাম।
ছোটবেলাতে ঈদের চাদ দেখার একটা সখ ছিলো, বড় হবার সাথে সাথে সে সখটা কমতে কমতে একেবারে চলেই গেছে বলা চলে। রমজান মাসের শেষ রোজা আজকে। বাসার সবাই মিলে একসাথে ইফতার করালাম। গত রোজায় বাবা মার সাথে ইফতার করতে পারিনাই, এবারো পারলাম না তেমন একটা, শেষ ইফতার টা করে নিলাম এবারের মতো। আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে আবার সামনের বছরহয়ত রমজান মাসের দেখা পাবো। মাগরিবের আজানের পর হয়ত ঈদের চাদ আকাশে দেখা গেছে, কিন্তু চাদ দেখার সখ হলোনা আর। মসজিদে গিয়ে নামাজ শেষ করে বাজারের দিকে একটু ঘুরে আসলাম পুরাতন বন্ধুদের সাথে।
ঈদের দিন সকাল হলো। ঈদের নামাজ পড়তে যেতে হবে। নিজের বেতনের টাকায় এবার একটা পান্জাবী কিনেছি জীবনে প্রথম বারের মতো। গোসল শেষ করে পান্জাবী পড়ে বাড়ির সবাই মিলে ঈদগায়ের দিকে হাটা দিলাম। ঈদগা একটু দুরে আমাদের বাসা থেকে, তেমন কোন আয়োজনের দেখা পলোম না ঈদগায়। হয়ত কমিটির আর্থিক সংকট ছিলো বা আয়োজন করার মত মন মানশিকতা ছিলনা। ঘাসের উপর খড় বিছিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যাবস্থা করা হয়েছে এখানে। একেবারে গরিবি কাজ কাম হলেও এখানকার কারো পকেটে টাকার কমতি আমি কখনো দেখিনি।
নামাজ পড়ে বাড়িতে চলে আসলাম কিছুক্ষন পর, ততক্ষনে সকাল ৯ টা বেজে গেছে। বাড়িতে এসে আম্মুর হাতের বানানো সেমাই খেলাম, সাথে রুটি ছিলো। আরো ছিলো ভুনা কালা ভুনা, যেটা সবচাইতে বেশি মজা ছিলো। তারপর একটু আসেপাশে নানা বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে আসতে আকাশ কালো হয়ে আসলো। আকাশ বাতাস কাপিয়ে বৃষ্টি আসতেছে। ঈদটা আর পালন করা হবেনা বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষন পর বৃষ্টি শুরু হলো। গ্রামের বাড়িতে একবার বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে যায় সব জায়গা। বাসা থেকে আর বের হওয়া হলোনা। যোহরের নামাজরে পর সবাই মিলে বাসায় খেলাম। অনেক দিন পর বাসার খাবার , পুলিশ লাইনের মেসের খাবার খেতে মুখে একেবারে অরুচি ধরে গিয়েছিলো।
যোহরের কিছুটা পর ৩ টার দিকে বৃষ্টি একটু কমলো। বাহিরে এস আমি আর আমার ছোট বোন মিলে কিছুক্ষন ছবি তোললাম, আমার বাবা মা সবাই মিলে ছবি তোললাম। আমার ছুটি নাই, আগামকিাল সকালেই চলে যেতে হবে। এভাবেই তেমন কোন আরম্বর ছাড়াই আমার রোজার ঈদ শেষ হয়ে গেলো। কি আর করা, তারপরের দিন দুপুরের খাবার খাবার পর বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হলাম।
0 মন্তব্যসমূহ
ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য