পুলিশ কথন। (আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)।

 

আমি সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিভাগে বিবিএ এমবিএ কমপ্লিট করে এই চাকুরীতে যোগদান করেছি। পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধব সকলের চাহিদা ছিল হয়তো কোন একটি সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরি। নিজেরও চাহিদা ছিল দেশের প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু মহান আল্লাহর রিজিকের পরিকল্পনায় চলে আসলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর এই চাকুরীতে। সরকারি ব্যাংকের চাকুরীও কপালে জুটে ছিল।  কি জানি হয়তো কোমরে পিস্তল এর ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারিনি😓। কিন্তু এই কোমরের পিস্তল যে ক্রমেই পুলিশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে সেটা বুঝলে এই চাকুরিতে আসতাম না। সব জায়গায় সমালোচনা চলে, বেতন নিয়েও পুলিশ ফাংশন করছে না, আইনগত কোন সহযোগিতা করছে না। পুলিশকে ফাংশন করানোর জন্য কি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলতে পারবেন? পুলিশ হিসেবে নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, পুলিশ শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করলে দেশ ভালো থাকতে পারবেনা, পুলিশ আন্তরিকতা দিয়ে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করলেই দেশ ভালো থাকবে। ৪-৫ বছরের চাকুরি জীবনে অনেক ক্রাইম নিয়ে কাজ করেছি। অসংখ্যবার পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে চোর এবং ছিনতাইকারীদের নানা অভিযোগে জর্জরিত😓। দিনশেষে যারা স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে নিজের ডিউটিটুকু করে চুপচাপ বাসায় গিয়ে ঘুমাচ্ছে তারা এখন শান্তিতে আছে। আর যারা রাত দিন এক করে ক্রাইম এগেইনস্ট প্রোপার্টি নিয়ে কাজ করেছে, অনেকেই নানা রকম মিথ্যা হুমকি অভিযোগ মাথায় নিয়ে পথে পথে ঘুরছে। এক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা তো দূরের কথা বরং হেনস্থার শিকার হবেন। গতকাল ডবলমুরিং থানার দুজন সাব ইন্সপেক্টর ছিনতাইকারীকে ধরতে গিয়ে চুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। সাথে অস্ত্র থাকলেও চালানোর সাহস করতে পারেনি। ছিনতাইকারীদের চুরিকাঘাতে তাদের মৃত্যু হলে তারা মরে যাবে কিন্তু পরিবার বেঁচে যাবে(পেনশন এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা)। কিন্তু তারা অস্ত্র চালালে পরিবারসহ শেষ (চাকুরি শেষ, জেল জরিমানা)। আন্তরিকতা পাবেন কোথায়! আন্তরিকতার মাকে তো আপনারা ৫ই আগস্ট ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র পোশাক গায়ে জড়িয়ে আমি যদি কোন অনৈতিক কিংবা শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ি অবশ্যই আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন, যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন, শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। যাদেরকে পুড়িয়ে মেরেছেন, ঝুলিয়ে মেরেছেন, পরিবারে আক্রমণ করেছেন তারা সবাই অপরাধী ছিল বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবেন? সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন ইন্সপেক্টর স্যারকে (যিনি কখনো ক্রাইমে চাকুরি করেননি) যাত্রাবাড়ীতে বাসে চেকিং করে ব্যাগের মধ্যে পুলিশের পোশাক থাকার কারণে মারার পরে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যায়। কয়দিন আগে ঢাকার উত্তরায় কয়েকজন ছিনতাইকারী/চাঁদাবাজকে গ্রেফতারের ঘটনায় থানায় হামলা হয়েছে। চাঁদাবাজ/ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়নি বরং ওসি, সাব ইন্সপেক্টর ক্লোজড এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। কই এসব নিয়ে তো আমরা কখনো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেইনি!

মনোবল জিনিসটা হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত! এটা কারো জোর করে চাপানো সিদ্ধান্ত না। আমার কয়েকজন কাছের মানুষকেও দেখেছি ফেসবুকে বলতে, "আড়াই লক্ষ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করুন, আমরা বেকার যুবসমাজ পুলিশের চাকুরি করার জন্য প্রস্তুত আছি "। একটা ব্যাচে সর্বোচ্চ 2000 সাব-ইন্সপেক্টর আপনি প্রস্তুত করতে পারবেন, তাও সম্পূর্ণ এক বছরের পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে। আপনি পারবেন দেশের বর্তমানে কর্মরত সবাইকে ছেঁটে ফেলে একসাথে ২০/৩০ হাজার সাব-ইন্সপেক্টর নতুন করে নিয়োগ দিয়ে মাঠে নামাতে! বিষয়টা প্রত্যেকটা পদক্রমের জন্য সমান। যাদের যত পাবলিক ডিলিংস বেশি তাদের তত বেশি মেনটেন করে চলতে হয়, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অল্প কদিন পাবলিক ডিলিংসে এসে দাদাবাবুদের অবস্থাতো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, রাস্তায় নেমে মোটা ভারী ওজনের পোশাক বুলেটপ্রুফ হেলমেট লাগিয়ে টানা ১২ ঘন্টা ডিউটি করা আর ঘরে বসে সুশীল সমাজের মতো ফেসবুকে স্ট্যাটাস কিংবা ভিডিও দেওয়া কখনোই এক নয়। দেশের এত মেধাবী সুশীল সমাজ কিংবা রাজনীতিবিদদের মাথায় একটা জিনিস শুধু আসছে না বাংলাদেশ পুলিশ কোন দলীয় সংগঠন নয়, কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ সরকার দলীয় সংগঠন। সব সময় তারা রানিং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মানবে এখন যেভাবে মানছে। গুটিকয়েক সদস্য আছে যারা দলীয় হয়ে কাজ করেছে, তাদেরকে নিউট্রাল করুন। কিন্তু আপনারা জোর করে আড়াই লক্ষ পুলিশ সদস্যকে আ**** ** দলীয় সদস্য বানানোর চেষ্টা করছেন। এই বিষয়টাতে আপনাদের লাভের চেয়ে বরং ক্ষতি হচ্ছে 🙂। আমরাও চাই জনগণের সেবক হতে। পুলিশের একমাত্র দাবী ছিল পলিটিক্যাল প্রভাবের বাইরে গিয়ে চাকরি করার। সম্পূর্ণ দেশ তো সংস্কার করে ভরিয়ে ফেললেন এটা করতে পেরেছেন? পারবেনও না। কারণ যাহাই লাউ তাহাই কদু। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত করুক, বুঝার তৌফিক দান করুক।