মিন্নি : নয়ন বন্ড : রিফাত শরিফ : ঘটনার শেষ




আ’দালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দিতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেছেন, একটি গো’পন মোবাইল ফোন নম্বরে তিনি নয়ন ব’ন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিফাতকে শিক্ষা দিতে বলেন।


ওই নম্বরে শুধু নয়নের সঙ্গেই কথা বলতেন তিনি। মোবাইল নম্বরটি নয়নের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এমনকি রিফাত খু’ন হওয়ার পরও ওই নম্বরে নয়নের সঙ্গে মিন্নির দীর্ঘ সময় ধরে ফোনালাপ হয়।


পলাতক থাকা নয়নকে মিন্নি বলেন, ‘তুমি তো রিফাতরে কোপাইয়া মাইরা ফালাইছ। এখন তো তুমি ফাঁ’সির আ’সামি হইবা।’ হ’ত্যাকা’ণ্ডের আগে-পরে এসব কথাবার্তার ভয়েস রেকর্ড ও কললিস্ট সিডি আকারে মা’মলার নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।


বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইস’লাম গাজীর খাসকাম’রায় ১৯ জুলাই এ জবানব’ন্দি রেকর্ড করা হয়। খাসকাম’রায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানব’ন্দি রেকর্ড করার সময় বিচারক ও মিন্নি ছাড়া আর কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।





আড়াই পৃষ্ঠার জবানব’ন্দিতে রিফাত খু’নের বিবরণ দেন মিন্নি। পু’লিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র রোববার এসব তথ্য নিশ্চিত করে।


তবে এই জবানব’ন্দি প্রত্যাখ্যান করেছে মিন্নির পরিবার। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর রোববার রাতে বলেন, ‘আহা রে এই হল দুনিয়া।


আমা’র মেয়েটারে মা’রধর করে জবানব’ন্দি নিয়েছে পু’লিশ। জে’লখানায় যখন আমি কথা বলতে গেছি তখন মেয়েটা আমা’র কা’ন্নায় ভেঙে পড়ে। বলেছে, ‘বাবা পু’লিশ আমাকে যা শিখিয়ে দিয়েছে তাই বলেছি।


আমি এ ঘটনার সঙ্গে জ’ড়িত নই। স্বা

মীকে আমি কেন খু’ন করাতে যাব।’ তিনি বলেন, ‘১২ ঘণ্টা পু’লিশ লাইনে বসিয়ে রেখে আমা’র মেয়েকে প্রচুর মা’রধর করা হয়। যখন আ’দালতে তোলা হয় তখন আমা’র মেয়ে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছিল না।’


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরগুনার পু’লিশ সুপার মা’রুফ হোসেন রোববার বলেন, ‘মিন্নির পরিকল্পনায় রিফাত শরীফ খু’ন হন। তিনি আ’দালতে দেয়া জবানব’ন্দিতে সব স্বীকার করেছেন।





জবানব’ন্দিতে মিন্নি বলেন, ৬ লাখ টাকা কাবিনে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর নয়ন বল্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নয়ন ব’ন্ডের মা সাহিদা বেগমসহ অনেকেই এই বিয়ের বিষয়টি জানতেন।


কিন্তু মিন্নি বিয়ের বিষয়টি গো’পন রেখে পরে রিফাতকে বিয়ে করেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়ন ব’ন্ডের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। কলেজের দেয়ালের নিচ দিয়ে তিনি নয়নদের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন।


জবানব’ন্দিতে মিন্নি বলেন, নয়নের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। কারণ মিন্নির একটি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও নয়নের কাছে ছিল।


এছাড়া জুনের ৩ তারিখে নয়ন ব’ন্ড গ্রুপের সদস্য হেলালের মোবাইল ফোন সেট জো’র করে নিয়ে যায় রিফাত শরীফ। এ নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাতের কথা কা’টাকাটি হয়।


একপর্যায়ে নয়ন ব’ন্ড মিন্নিকে বলেন, ‘রিফাতকে ফোন ফিরিয়ে দিতে বল। না হলে পরিস্থিতি খা’রাপ হবে। হ’ত্যাকা’ণ্ডের দু’দিন আগে রিফাতকে মিন্নি বলেন, তুমি হেলালের ফোন ফেরত দাও।’


একথা শুনে রিফাত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নয়ন ব’ন্ডের সঙ্গে মিন্নির যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চেয়ে মিন্নিকে প্রচণ্ড মা’রধরও করে রিফাত। এতে মিন্নি ক্ষুব্ধ হন।


পরদিন নয়ন ব’ন্ডের কাছে রিফাতের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ দেন মিন্নি। তিনি রিফাতকে শিক্ষা দিতে বলেন। এরপর নয়ন ব’ন্ড তাকে শিখিয়ে দেন, কোথায় কিভাবে রিফাতকে নিয়ে হাজির থাকতে হবে।


কথা অনুযায়ী মিন্নি ঘটনার দিন রিফাতকে কলেজে এসে তাকে নিয়ে যেতে বলেন। রিফাত এলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হন মিন্নি। কিন্তু তখনও নয়নের লোকজন প্রস্তুত না হওয়ায় মিন্নি গো’পন ফোন নম্বর দিয়ে নয়ন ব’ন্ডের নম্বরে ফোন করে বলেন, ‘তোমা’র পোলাপান কই।’





এরপর নয়ন ব’ন্ডের ছেলেরা আসার কিছুক্ষণ পরই মিন্নি রিফাতকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হন। এ সময় নয়ন ব’ন্ডের সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে কিল-ঘুষি দেয়ার পর এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে।


এদিকে মিন্নির মা মিলি বেগম কা’ন্নাজ’ড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আম’রা শুরু থেকেই বলছি, শম্ভুর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন নিজেরা বাঁচতে মিন্নিকে ফাঁ’সাতে চাইছে। মিন্নি একেবারেই নির্দোষ।’


মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা হমায়ুন কবির বলেন, মিন্নি অনেকগুলো মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতেন। এসব নম্বর ব্যবহার করে তিনি খু’নের আগে-পরে নয়ন ব’ন্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন।


তবে সিমগুলো তার নিজের নামে ছিল না। তিনি জানান, নয়ন ব’ন্ড মা’দক ব্যবসায়ী ছিলেন। মিন্নির একটি ব্যাংক হিসাবে নয়ন ব’ন্ডের মোটা অংকের টাকা রাখা আছে। ইতিমধ্যে এর প্রমাণও তারা পেয়েছেন।


পু’লিশ বলছে, মিন্নির জবানব’ন্দির প্রতিটি পর্যায়ের প্রমাণ সংগ্রহ করে তা মা’মলার নথিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে নয়নের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ড, গো’পন মোবাইল নম্বরের সিম, কল লিস্ট, ভিডিও ফুটেজ ও খুদেবার্তা বা এসএমএস।






বরগুনার একজন পু’লিশ কর্মক’র্তা বলেন, ঘটনার পর থেকেই মিন্নি স’ন্দেহের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মিন্নি রিফাতকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।


এমন দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় জনমত মিন্নির পক্ষে চলে যায়। এজন্য নিরাপত্তার নামে তাকে মূলত নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। তবে শেষমেশ পু’লিশি জেরার মুখে তথ্যপ্রমাণ দেখেশুনে মিন্নি সব কিছু অকপটে স্বীকার করেন। এ সময় তাকে গ্রে’ফতার দেখানো হয়।


২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সিনেমা স্টাইলে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে নি’র্মমভাবে কু‌‌’পিয়ে খু’ন করা হয়। এ ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলে। চাঞ্চল্যকর এ খু’নের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও মা’দক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ছিল। এ নিয়ে জনমনে নানা ধরনের অ’ভিযোগও আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য