ওরা গেলো
কোথায়?
এমনকি পাঁচ-ছয় দশক আগেও দেশজুড়েই ছিলো রয়েল বেঙ্গল টাইগারের
বিস্তৃতি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঘাবাড়ি, বাঘা, বাঘবেড়, বাঘাদিয়া, বাঘের টেক,
বাঘঘোনা, টাইগার হিল, টাইগার পাস ইত্যাদি নানা নামের এলাকাই তার স্বাক্ষী৷ বহু
সাহিত্যে সারা বাংলা জুড়েই বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে তাই বাগধারাতেও উঠে এসেছে
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই নাকি সন্ধ্যা হয়! এইতো সেদিন, ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাঘ
বিবেচিত জতো জনদূর্ভোগ হিসেবে। তাই বাঘ মারলে মিলতো আর্থিক প্রণোদনা৷ বন বিভাগে
চাকুরীই ছিলো শিকারী পদবিতে৷ বিখ্যাত পচাব্দী গাজীরাও ব্যক্তিগতভাবে বা বন বিভাগের
হয়ে শখানেক বাঘ মেরেছেন মূলত নেশা আর আর্থিক প্রনোদনার কারণেই। আর রাজা-বাদশা-নবাব
থেকে অধুনালিপ্ত জমিদারদের জন্য বাঘমারা ছিলো আভিজাত্যের প্রকাশ।
দেশজুড়ে জড়িয়ে থাকা সেইসব বাঘ মেরে, জঙ্গল কেটে কবেই
শহর বানিয়ে ফেলেছি আমরা। এখন প্রচলিত মতানুসারে তারা শুধু সুন্দরবনেই টিকে আছে।
ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে করা সাম্প্রতিক বাঘশুমারী বলছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা
১১৪টি। কিন্তু সুন্দরবনের অতি পরিশ্রমী বাঘের (ছবিঃ সৌম্যজিত নন্দী, উইকি) বাইরেও
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা এত এত বাঘ কি একদমই বিলুপ্ত হয়ে গেলো? তা কিভাবে সম্ভব?
আমাদের আছে বিস্তৃত পার্বত্যাঞ্চল, সিলেটের সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ী জঙ্গল।
কোন না কোন বনে এক-আধটা বাঘ তো থেকে যেতেই পারে! তাইনা?
দার্জিলিং পাড়ার কারবারীর (লালার বড় ভাই) কাছে বাঘ দেখার
স্বাক্ষীর সন্ধান পেয়ে তার খোঁজে নিকটবর্তী ম্রো পাড়ায় গেলাম। তিনি ছিলেন
অনুপস্থিত বাট গল্পটা দেখলাম সবাই জানে৷ কাছাকাছি ঘটনা শুনলাম লামাফেরত একজনের
মুখে। রুমার গহীনে মদের নেশায় চূর এক দাদা শুনিয়েছিলেন ছোটবেলায় তার বাঘের
বাচ্চা পোষ মানানোর গল্প। সবই অনির্ভরযোগ্য সূত্র!
এই বিষয়ে তিন বছর আগে ইংল্যান্ডের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রামে CCA'র খুঁজে পাওয়া বাঘের পায়ের ছাপের ছবিই এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রামাণ্য এভিডেন্স। এই নিউজটি প্রথম আলোসহ দেশের অনেক মিডিয়া ফলোআপ করলেও সুন্দরবনের বাইরে বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে দেশবাসী রয়ে গেছে সেই তিমিরেই!
অথচ ২০০৮ সালে সিলেটের পাথারিয়া পাহাড়ে বাঘ দেখা গেছে। লাঠিটিলার জঙ্গলে বাঘ দেখেছেন এমন দাবীদার একাধিক। যারা দেখেছেন তারা শিকারী মানুষ। হরিণ-শুকর মারতে বনে যায়। তারা চিতা আর বাঘের প্রভেদ করতে জানে।
সাজেক ভ্যালি নাম হলেও এটি কিন্তু আদতে ভ্যালি নয়, পাহাড়। সাজেকের পুবে মিজোরামের বিস্তৃত জঙ্গল। গুগল আর্থে খুঁজলে দেখা যায় ডামপা টাইগার রিজার্ভ নামের এক অভয়ারণ্য। খোঁজ নিয়ে জানলাম ওখানে এখন আর নাকি বাঘ নাই। কিন্তু উত্তর-পশ্চিমে আমাদের দেশের কাসালং রিজার্ভ ফরেষ্ট। গুগল আর্থে দেখলে দেখবেন কি ভয়াবহ ঘন বুনটের বন। সেই বনে অন্তত ৮টি বাঘ আছে বলে 'কার কাছে যেন শুনলাম'। আর স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী তো আছেই। সর্বশেষ ২০১০ সালেও সুনির্দিষ্টভাবে বাঘ দেখার দাবী পাওয়া গেছে কাসালং রিজার্ভে।
আমার দুই প্যারা আগে বর্ণিত ঘটনার বাইরেও ২০০৪ ও ২০১১ সালে বান্দরবানের সাঙ্গু রিজার্ভে বাঘ দেখার প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেছে। সেখানে অন্তত তিনটি বাঘের আনাগোনা থাকতে পারে। তবে যেহেতু বাঘের বিচরণস্থল শত বর্গকিলো হতে পারে তাই বাঘগুলো সীমান্তের এপার ওপার করতেই পারে। অসম্ভব কিছুনা।
সর্বশেষ বাঘ দেখার খবর শুনলাম বান্দরবান-রাঙামাটির রাইক্ষ্যং ভ্যালিতে। বাঘ গবেষক ড. মনিরুল এইচ খানকে গতবছর আজকের দিনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এক প্রোগ্রামে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, রাইক্ষ্যং ভ্যালিতে সীমান্তের এক আদিবাসী শিকারী বাঘ শিকার করতে সক্ষম হয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। বাঘের চর্বি -চামড়া মিয়ানমারে বিক্রি হয়েছে বিশ হাজার টাকায়। সে টাকায় সেই আদিবাসী শিকারী তার পরিবারের জন্য সোলার কিনেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে আমরা আশা করতেই পারি যে সুন্দরবনের ১১৪ টি ছাড়াও আরো অন্তত কিছু বাঘ টিকে আছে আমাদের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে। তবে আমরা গত ৩০-৪০ বছরে যেভাবে আমাদের পার্বত্যাঞ্চল ধ্বংস করেছি তাতে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে উচ্চস্তরের খাদক এখানে খাদ্যসংকটে ভুগবে। তাই হয়তো বাঘ এখানে স্থায়ীভাবে আবাস গড়ছেনা। তবে অপরিকল্পিত জুমচাষ, বসতি, পাহাড় কাটা, লগিং, পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হলে গড়ে উঠবে নিবিড় বনভূমি৷ সেইসাথে মায়া হরিণ, গাউর, সম্বরের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে বাঘ হয়তো স্থায়ীভাবেই ফিরে আসবে পার্বত্যাঞ্চলে। (সুন্দরবনের বাইরের বাঘ নিয়ে যার যা কিছু জানাশোনা, ধারণা কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন।)
বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল
টাইগার পৃথিবীর সুন্দরতম প্রাণী৷ আরো গর্বের ব্যাপার যে এই বাঘের নামকরণ আমাদের
নিজস্ব জনপদ বাংলার নামেই। প্রাকৃতিক বনভূমিতে বাঘের অস্তিত্ব একটি দেশের মর্যাদা
বাড়িয়ে তুলে বহুগুনে। পৃথিবীতে মাত্র ১৩ টি দেশে বাঘ টিকে আছে। আমরা সেই গর্বিত ১৩
টি দেশের অন্যতম। আমার দৃঢ বিশ্বাস সুন্দরবনের বাইরেও বাঘ একেবারে হারিয়ে যায়নি।
তারা আছে অবশ্যই। অপেক্ষা শুধু প্রামাণ্য দলিলের।
বাঘ নিধন যখন আনন্দ ভ্রমন :
আগে সমগ্র বাংলাদেশ জুরেই বাঘের দেখা পাওয়া যেত। এখন তো বাঘ পাওয়া যায় ই না, বরং যদি কোথাও মেছো বাঘ বা বন বিড়াল ও পায় পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেয়া হয়।
দেশের জনসংখ্যার চাপ বেশি, নতুন নতুন আবাস স্থল তৈরি করার ফলে বাঘের বিচরন ক্ষেত্র কমতে কমতে তা এখন সুধুই সুন্দরবন। একসময় আমাদের কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাতেও বাঘ দেখা যেত। মোঘল আমলে চান্দিনা থানা নাম ছিল না যায়গা টির। নাম ছিল বরকামতা গ্রাম।
সেখানে এক মোঘল কর্মচারী ছিল। তিনি যখন পোস্টিং হয়ে চান্দিনা এলেন তখন দেখলেন এখানকার মানুষ রাতে বাঘের ভয়ে ঘর থেকে বের হয়না। তিনিও কিছুটা ভয় পেতে লাগলেন।
তারপর বুদ্ধি করে তিনি তার বাড়ির সামনে বড় একটা উচু যায়গাতে সাদা গ্যাস হ্যাজেক বাতি জ্বালিয়ে দিলেন রাতে। ফলে আলো দেখে বাঘ আর তার বাড়ির আশে পাশে আসতো না। এলাকার মানুষ তখন ঐ বাতিটাকে চাদের সাথে তুলনা করতো। তারা বলত চাদনি।
সেই চাদনি থেকে ই আজকের চান্দিনা। বৃটিষ রা চাদনি কে ভুল করে চান্দিনা বলতো। তখন তারা যায়গার নামই চান্দিনা রেখে দিল। আর এখন সেই চান্দিনাতে বাঘ তো দুর বুড়াল শ্রেণীর টিকে থাকা মুসকিল।
বাঘ মেরে ছবি তুলছেন লর্ড কাজন ও তার স্ত্রী। এটি ছিল তার বাঘ মারার একটি মিশন ইন ঢাক্কা।






1 মন্তব্যসমূহ
মানুষ বাঘ খাইয়া লাইছে ��������
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য